কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখার পাশাপাশি বিশেষ কিছু উক্তি আমাদের মাঝে দিয়ে গেছে যেগুলো আমাদের জীবনে পথ চলতে এবং পথকে বেগবান করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। আজকে আমরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ নিয়ে আলোচনা করব।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি সমূহ জানতে প্রথমেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে জানা উচিত। তার জীবন আদর্শ, তার লেখনি সম্পর্কে জানা উচিত। চলুন আমরা প্রথমেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্কে কিছু দারুন তথ্য জেনে নিই।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৪শে মে ১৮৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অখণ্ডিত ভারতবর্ষের চুরুলিয়া বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ব্রিটিশ ভারত বর্তমানে যেটি বর্ধমান জেলা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অধিষ্ঠিত। এখানেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম বাঙালি কবি ও গীতিকার রূপে আবির্ভাব হন। তার জীবন দশায় মাত্র 23 বছরের সাহিত্যিক জীবন তিনি অতিবাহিত করতে পেরেছেন। এই অল্প কিছু সময়ে তিনি যে প্রাচুর্য আমাদের দিয়ে গেছেন তা তুলনারহিত। সাহিত্যের প্রায় অনেকগুলো শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন তবে তাকে প্রধানত কবি হিসেবেই আমরা জেনেছি। তিনি পেশায় একজন কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার এবং সম্পাদনা ও করেছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি সমূহ ,বাণী সমূহ
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি সমূহ
১. “ভালোবাসার কোনো অর্থ বা পরিমাণ নেই”। ২. “প্রেম হল ধীর প্রশান্তি ও চিরন্তন”। ৩. “তোমাকে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন”। ৪. “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি আমার অপরাধ? চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ”। ৫. “ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবনের দুঃখের ও জড়তার”। |
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা সমূহ
৬. “ভালোবাসাকে যে জীবনে অপমান করে সে জীবনে আর ভালোবাসা পায় না”। ৭. “আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খুলে দাও, দাও বিদায়”। ৮. “কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন”। ৯. “যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে, বুঝবে সেদিন বুঝবে”। প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত বাণী ও উক্তি সমূহ: প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত বাণী: ১০. “দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে। মনেতে জাগে, হাজার বছর আগে, হজরত বেলালের অনুরাগে। তার খাস এলাহান, মাতাইতো প্রাণ। ভাঙ্গাইতো পাষান, জাগাইতো মহিমারে। দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে।“ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি সমূহ: ১১. “মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।” ১২. “মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারে”। ১৩. ” হয়তো তোমার পাব দেখা যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা”। বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ বিষয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি সমূহ:- ১৪. ”বল বীর-বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।”- কাজী নজরুল ইসলাম (কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা থেকে পাওয়া) ১৫. ”কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।” |
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ
১৬. ”ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?” ( কাজী নজরুল ইসলামের ‘সর্বহারা’ কাব্যের ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ থেকে পাওয়া) ১৭. ”আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন।” ( উৎস ‘ বিদ্রোহী’ কবিতা) ১৮. ”আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।”- (উৎস ‘বিদ্রোহী’ কবিতা) ১৯. “মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।” ২০.“ আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।” (উৎস – ‘বিদ্রোহী’ কবিতা) |
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত বানী সমূহ
২১. ”বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।“
২২. “নর-ভাবে আমি বড় নারী ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী!’ (উৎস- ‘সর্বহারা’ কাব্যের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা)
২৩. “কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষী নারী।” (উৎস -‘নারী’ কবিতা)
২৪. “আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায়ে মল,
মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল!
যে-ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যতো আবরণ।” (উৎস- ‘নারী’ কবিতা)
২৫. ”সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!
শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!“(উৎস- ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের ‘মা’ কবিতা)
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ
২৬. “তোমার মমতা-মানিক আলোকে চিনিনু …
মাতা তুমি লাঞ্ছিতা বিশ্ব-জননী।
তোমার আঁচল পাতা নিখিল দুঃখী-নিপীড়িত তবে,
বিষ শুধু তোমা দহে যথা তব মাগো পীড়িত নিখিল ধরণীর ভার বহে।“- কাজী নজরুল ইসলাম
২৭. “ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে?
জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!”- কাজী নজরুল ইসলাম।
২৮. “খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা। ”
২৯. “কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা ?” ( উৎস- “উপেক্ষিত” কবিতা)
ধর্ম, মানবতা ও সমাজ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি :-
৩০. “নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই,তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।”
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ
৩১. “মৌ-লোভী যত মৌলবি আর মোল-লা’রা কন হাত নেড়ে
দেব-দেবী নাম মুখে আনে সবে দাও পাজিটার জাত মেরে
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও
যদিও শহীদ হইতে রাজি ও
আমপারা পড়া হামবড়া মোরা এখনও বেড়াই ভাত মেরে
হিন্দুরা ভাবে পার্শী শব্দে কবিতা লেখে ও পা’ত নেড়ে।”
৩২. “পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক।” ( উৎস-” সত্য-মন্ত্র” কবিতা)
৩৩. “যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!”
৩৪. “গাহি সাম্যের গান –
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই , নহে মহীয়ান।”( উৎস- ‘মানুষ’কবিতা)
৩৫. “অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে; সর্বনির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত উক্তি সমূহ:
৩৬. “ হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র ।“(উৎস-“কান্ডারী হুঁশিয়ার” কবিতা)
৩৭. “জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীল তাই কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল? যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত আজ না হয় কাল ভাঙবে সে ত।যাক না সে জাত জাহান্নামে রইবে মানুষ নাই পরোয়া।”
৩৮. “যেথা সবে-সম-পাপী
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি, জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও, টুপি পড়ে টিকি রেখে সদা বলো যেন তুমি পাপী নও
পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং ট্রেডমার্কার ধুম
পুলিশি পোশাক পরিয়া হয়েছ পাপের আসামী গুম”। ( উৎস- ‘পাপ’ কবিতা)
৩৯. “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই”।
৪০. “খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে”।